৭ টি উপায়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির উপায়!(How to make positive attitude?)


positive


সফলতার জন্য সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি যে কোন জিনিসের ভালো খারাপ নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গির উপর। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে মানুষ অনেক বাঁধা, সমস্যা ও অভাবের মধ্যেও নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।

 অপরদিকে নেতিবাচক চিন্তা মানুষের সকল কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে নিয়মিত ভাবে নেতিবাচক চিন্তা  মানুষকে  শারীরিক মানসিক ভাবে অসুস্থ করে ফেলে। সেইসাথে সফলতার পথের বড় বাধাও এই নেতিবাচক চিন্তা নেতিবাচক চিন্তার কারনে মানুষের ভিতরে গুণটিও বিকশিত হতে পারে না। মানুষকে নতুন উদ্যমে কাজ করতে বাঁধা দেয়। সব সময় মনে হয় আমি পারব না।সুতরাং , ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা খুবই প্রয়োজন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে তৈরি করবেন এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ?

কিছু মানুষ ছোটবেলা থেকেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হয়,  আবার কাওকে ধীরে ধীরে নিজের মধ্যে এটা তৈরি করে নিতে  হয়।  নিচে ইতিবাচক দৃস্টিভঙ্গী তৈরি করার কিছু পদ্ধতি দেয়া হল। এই পদ্ধতিগুলো নিয়মিত অনুসরণ করলে আপনিও ধীরে ধীরে  তৈরি করতে পারবেন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি-  


১।  সব কিছুর ইতিবাচক দিকটি খুজুন (Try to find positive sides of everything) :



positive side

 সবকিছুরই নেতিবাচক ইতিবাচক দিক রয়েছে। দেখার বিষয় হচ্ছে আপনি কোনটা কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ? আমরা সবার  দোষ খুজতে এত ব্যস্ত থাকি যে, কারো ভালো দিক আমাদের চোখে পরে না।   ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সর্ব প্রথম যেটা করতে হবে তা হচ্ছে, এখন থেকেই আপনার চারপাশে সবকিছুতে ইতিবাচক গুনটি  খোজা শুরু করুন। একসময় এটা আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে।  দেখবেন সব কিছুর খারাপ দোষ আসলে কম, বরং ভালোটাই বেশি। আশে পাশের মানুষদের প্রতি রাগ -ক্ষোভ জমিয়ে রাখলে মনটা সবসময় নেতিবাচক চিন্তায় ভরে থাকবে।  কখনই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে না।

  ইতিবাচক গুণ খোজা অভ্যাসে পরিণত করার জন্য আপনাকে নিয়মিত  কিছু অনুশীলন বা প্র্যাকটিস করতে হবে-


  • ·       আমি সবাইকে ভালোবাসি-

মনে মনে আপনার আশে পাশের প্রতিটা মানুষের টা করে ভালো  গুণ খুঁজে বেড় করুন। তাদের উপকার গুলো বার বার মনে করার চেষ্টা করুন। ভুল গুলো ক্ষমা করুন  এবং প্রত্যেকের সম্পর্কে মনে মনে  বলুন, আমি তাকে অনেক ভালোবাসি। হ্যা, মনে মনে এই কথাটি বার বার আওড়ান।  দেখবেন আসে পাশের মানুষগুলোকে ভালবাসতে শুরু করেছেন। তাদের প্রতি সৃষ্ট এই ভালোবাসাই আপনাকে দারুন ইতিবাচক চিন্তার মানুষ করে তুলবে।  


  • ·       আপনার মনকে সর্বদা ভালো কাজে ব্যস্ত রাখুন-

  কথায় আছে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। এজন্য নিজেকে এত ব্যস্ত রাখুন যেন নেতিবাচক চিন্তা আপনার মাথায় না ঢুকে ।



  • ·      বেশি করে অন্যের উপকার করুন।

বেশি করে অন্যের উপকার করুন। বিনিময়ের আশা করবেন না। দেখবেন এই ভালো কাজটি কিভাবে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে দিচ্ছে।  


২। কোন কাজ পরে করার জন্য ফেলে রাখবেন না-   

complete

কোন কাজ বেশি সময়ের জন্য ঝুলে থাকলে একধরনের ক্লান্তি চলে আসে, আর তার থেকে শুরু হয় নেতিবাচক চিন্তা।  

পরিশ্রম মানুষকে যত না ক্লান্ত করে তার চাইতে বেশি ক্লান্ত করে কাজ কে অনেক দিন ধরে জমিয়ে রাখলে। এজন্য অলসতা না করে হাতের কাজগুলো দ্রুত শেষ করে ফেলুন।
কোন কাজ শুরু করেছেন কিন্তু অর্ধেক করার পর আর শেষ করা হয়ে উঠছে না? কখন   আপনার অসুস্থতা, পরিবারের কোন ট্রাজেডি, দুর্ঘটনা এমন নানা সমস্যা এসে দেখা দিচ্ছে। তাহলে মনে রাখবেন সমস্যা কখনই শেষ হবে না।

  ঝেড়ে উঠে দাঁড়ান! বাকি কাজটা শেষ করে ফেলুন। অর্ধেক কাজ এক ধরনের ছিদ্রযুক্ত জলাধার, যা ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে মানুষের কর্ম শক্তিকে।

৩। কৃতজ্ঞ থাকুন:

Thanks to Allah

আমরা বেশির ভাগ মানুষ আমাদের যা আছে তা নিয়ে তৃপ্ত নই। যা নেই সেটার হিসাব করতে ব্যস্ত। যেমন, কেও  দুর্ঘটনায় চোখ, হাত বা কোন অঙ্গ হারালে তাকে বিশাল অংকের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। এখন কেও কি ক্ষতিপূরণ এর লোভে তার অঙ্গ হারাতে চাইবে? না চাইবে না।  আমাদের যা আছে তা না হারানো পর্যন্ত আমরা তার মূল্য বুঝি না এজন্য নিজের যা আছে তার জন্য সবসময় সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানান। দেখবেন আপনি যত বেশি বেশি ধন্যবাদ জানাচ্ছেন ততই আপনি আরও বেশি অনুধাবন করতে পারবেন আপনার কি আছে।  

তার মানে এই নয় যে আমদের যা আছে তাতে আত্মতৃপ্ত হয়ে আমরা বসে থাকব। বরং যা আছে তার মূল্য অনুধাবন করে, তা সঠিক ভাবে কাজে লাগিয়ে জীবনের বড় লক্ষ অর্জন করার চেষ্টা করুন। বেশির ভাগ মানুষ সারাজীবনেও তার সবচেয়ে শক্তির জায়গা অনুভবই করতে পারে না।   


৪। নতুন কিছু শিখুন:

learning

  ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করার জন্য প্রয়োজন নিজের মন-মেধাকে সজীব রাখা। আর, সজীব রাখার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হচ্ছে সবসময় নতুন কিছু শেখা। জীবনে উন্নতির জন্য এটা খুব প্রয়োজন।

একটা গল্প বলি-

একটি প্রতিষ্ঠানে ১০ বছর ধরে একজন কাঠুরে কাজ করত। কিন্তু, অনেক বছর কাজ করার পর তার বেতন একই ছিল। একটু বাড়ছিল না। কয়েকদিন পর প্রতিষ্ঠানে আরেকজন কাঠুরে নিয়োগ দেওয়া হল।

 কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় কয়দিন পরই নতুন কাঠুরের বেতন বাড়ান হল। পুরানো কাঠুরে অবাক হয়ে মালিক কে জিজ্ঞেস করল, আমি ১০ বছর কাজ করার পরও আমার বেতন এক টাকাও বাড়ল না। আর নতুন কাঠুরে কয়দিন কাজ করার পরই তার বেতন বাড়ল কেন? 

মালিক উত্তর দিল,তুমি গত ১০ বছর ধরে একই পরিমাণ গাছ কাটছ। নতুন কাঠুরের গাছ কাটার পরিমাণ তোমার গাছ কাটার পরিমাণের চাইতে বেশি। তুমি পরিমাণ বাড়াও , তোমার বেতন বাড়বে।  কথা শুনে পুরাণ কাঠুরে পরদিন থেকে বেশি করে গাছ কাটার চেষ্টা করতে থাকল। কিন্তু কোন ভাবেই সে নতুন কাঠুরের সমান গাছ কাটতে পারল না।   তখন সে নতুন কাঠুরেকে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমার এত বেশি পরিমাণ গাছ কাটার রহস্য কি?

 নতুন কাঠুরে একটু হেসে উত্তর দিল , কোন রহস্য নেই,আমি  প্রতিদিন আমার কুঠারে শান দেই। তুমি শেষ কবে তোমার কুঠার শান দিয়েছ?! পুরানো কাঠুরে তার উত্তর পেয়ে গেল।

ঘটনা থেকে একটা  শিক্ষা পাওয়া যায় যে, আমরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকেই যথেষ্ট মনে করি। ফলে জীবনে উন্নতি করতে না পারলে আমরা  হতাশাগ্রস্ত হয়ে যাই এবং আমাদের নেতিবাচক দৃষ্টি তৈরি হয়। এজন্য জীবনে যত উপরেই উঠুন না কেন, বা বয়স যাই হোক না কেন সব সময় নতুন কিছু শিখুন , নতুন কে সাদরে গ্রহণ করুন।  তবেই তৈরি হবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।


৫। নেতিবাচক মানুষ থেকে দূরে থাকুন:

Negative people


মানুষ তার কাছের মানুষ এবং পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়।  জীবন সফল হবার জন্য যেমন প্রয়োজন সঠিক সঙ্গী নির্বাচন করা , ঠিক তেমনি প্রয়োজন নেতিবাচক সংগ থেকে নিজেকে দূরে রাখা। নেতিবাচক মানুষের সাথে থাকলে মন নেতিবাচক চিন্তাই বেশি করবে। এজন্য ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করে এমন মানুষদের সাথে থাকার চেষ্টা করুন। নেতিবাচক মানুষ থেকে দূরে থাকুন।

এখন প্রশ্ন করতে পারেন, কিভাবে চিনবেন নেতিবাচক সঙ্গী? কিছু বৈশিস্ট দিয়ে নেতিবাচক মানুষ চেনা যায়। যেমন- 


  • যারা সবসময় হতাশা মূলক কথা বলে,
  • মানুষের দুর্বল বিষয়গুলো বার বার তুলে ধরে,
  • যারা অন্য মানুষ সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলে।
সুতরাং, এধরনের মানুষ চিনুন। হয়ত সব সময় তাদের এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে চেষ্টা করুন তাদের কথা যেন আপনার মন মস্তিষ্ক কে প্রভাবিত করতে না পারে



৬। নিজের কাজকে ভালবাসুন

Happiness

যে কাজ করুন না কেন, সেই কাজটিকে ভালবাসুন। কিছু কাজ আছে আমাদের পছন্দের, আবার না চাইলেও জীবনে আমাদের কিছু অপছন্দের কাজ করতে হয়। দেখা যায় জীবনের জন্য সেই কাজ গুলো করা ভীষণ প্রয়োজন। যদি দেখেন অপছন্দের কাজ হলেও তা খুব প্রয়োজন , তবে কাজটিকে ভালবাসতে শুরু করুন।

  যেমন, পড়া লেখা করতে একদম ইচ্ছা করে না? কিন্তু পড়া লেখা তো করতেই হবে।  তাহলে নিজেকে বার বার বলুন, বা অন্যদের সবসময় বলুন, আপনার পড়ালেখা করতে ভীষণ ভালো লাগে।
এই কৌশলটা খুব ভালো কাজ দেয়।দেখবেন ধীরে ধীরে পড়তে আপনার ভালো লাগছে।

সকালে উঠে রান্না করতে বিরক্ত লাগে? অফিসের কাজ অসহ্য লাগে?  কাজ করতে ভালো না লাগলে জীবনে নেতিবাচক চিন্তা বেশি আসবে। এজন্য প্রথমে জীবনে কাজটির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করুন। তার পর প্রথমে যতটুকু ভালো লাগে ততটুকু করুন। ধীরে ধীরে সময় বাড়ান। মনকে বার বার বলুন, এটা আমার কাজ। আমি এই কাজটিকে ভালোবাসি। দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার কাজের প্রতি একটা ইতিবাচক দৃষ্টি গড়ে উঠেছে।

৭। সকাল টা শুরু করুন ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে:

morning

মানুষের জীবনে সকাল টা কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সকালটা কাজে লাগাতে পারলে জীবন টাই পরিবর্তন হয়ে যাবে। সারা রাত ঘুমানর পর সকাল বেলা মাথা থাকে পরিষ্কার।সুতরাং এসময় ইতিবাচক চিন্তা গুলো ঢুকিয়ে দিন মাথায়। যেমন,ইবাদত করুন, মেডিটেশন করুন বা  ভালো ইতিবাচক বই পরুন বা ভালো কোন মোটিভেশনাল বক্তব্য শুনুন। দেখবেন দিনের শুরুই যদি হয় ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে তবে সারাদিন ইতিবাচক ভাবে যাবে।


সুতরাং জীবনকে সফল, সুন্দর আনন্দময় করে গড়ে তুলতে গড়ে তুলুন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। উপরের বিষয়গুলো নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে অভ্যাস করে ফেলুন। দেখবেন আপনিও হয়ে উঠেছেন একজন ইতিবাচক সফল মানুষ।

  

No comments

Powered by Blogger.