নিজের আত্মরক্ষা জন্য কি কাওকে হত্যা করা যাবে? আইন কি বলে?
মানুষের কাছে
সবচেয়ে প্রিয় তার জীবন। জীবন বাচাতে মানুষ আত্মরক্ষার চেষ্টা করে । অনেকেই জানে না
দেশের আইনে আত্মরক্ষা করার জন্য কাওকে হত্যা করা যাবে নাকি? আজকে সে সম্পর্কে বিস্তারিত
জানব।
একটি দেশের
জনগণকে নিরাপত্তা দেবার জন্য সরকারের পুলিশ বাহিনী থাকে। দেশের জনগণ তাদের জীবন এবং
মালের নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য যায়। পুলিশের দায়িত্ব
জনগণকে সাহায্য করা। তাদের জীবন এবং সম্পদের নিরাপত্তা দেওয়া।
কিন্তু, মানুষ
সবসময় নিরাপদ অবস্থায় থাকে না। হঠাৎ করে মানুষ
আক্রমণের শিকার হতে পারে। যখন তার জীবন ও মাল হুমকির সম্মুখীন হয়ে পরে । এমন
অবস্থা হতে পারে যে, সাহায্যের জন্য পুলিশের কাছে যাবার ও সময় নেই। আক্রমণকারীকে বাধা
দিতে না পারলে নিজের জীবনটাই হারাতে হতে পারে। এমন হতে পারে নিজের জীবন বাঁচাতে আক্রমণকারীকে
খুন করবার প্রয়োজন ও হতে পারে।
এখন স্বাভাবিক
ভাবেই প্রশ্ন আসে নিজের জীবন বাঁচানর জন্য
কাওকে খুন করলে কি শাস্তি পেতে হবে? দেশের আইন সেক্ষেত্রে কি বলে?
তাহলে আসুন
জেনে নেই আত্মরক্ষার অধিকার সম্পর্কে আমাদের দেশের আইনে কি আছে?
আত্মরক্ষার
অধিকার
কোন
ব্যক্তি হঠাৎ আক্রমণের শিকার হলে, নিজেকে বাঁচানর জন্য বা নিজের সম্পদ
ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য যে প্রতিরোধ গড়ে
তোলে তাকে বলা হয় আত্মরক্ষা।
পৃথিবীর সব দেশ তার
জনগণকে আত্মরক্ষা করার অধিকার দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশের
আইনে প্রতিটা নাগরিক কে আত্মরক্ষার অধিকার
দিয়েছে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ৯৬- ১০৬ ধারায় আত্মরক্ষা অধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
সাধারণত
দুটি সূত্রের উপর ভিত্তি করে এই আত্মরক্ষার আইনটি
তৈরি করা হয়েছে-
১.
প্রতিটা ব্যক্তিরই নিজের এবং অপরের শরীর ও সম্পত্তি রক্ষার
অধিকার রয়েছে।
২.
তবে কারো ক্ষতি করার জন্য এই অধিকার প্রয়োগ
করা যাবে না। একটি অবৈধ হস্তক্ষেপ বা আক্রমণ প্রতিরোধ
করার জন্য যতটুকু শক্তি প্রয়োগ করা প্রয়োজন তার অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করা যাবে না।
কোন কোন ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে?
কিছু
কিছু পরিস্তিতি আছে যখন একজন ব্যক্তি তার আত্মরক্ষা
করার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। যেমন-
১.
যদি কোন ব্যক্তি বুঝতে পারে তাকে এমন ভাবে আক্রমণ করা হয়েছে যার পরিণতিতে তার মৃত্যু হতে পারে,
২.
বা, যদি আশংকা করে আক্রমণের কারণে তার মারাত্মক আঘাত লাগতে পারে,
৩.
ধর্ষণ এর উদ্দেশ্যে আক্রমণ,
৪.
অস্বাভাবিক কাম – লালসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ এর শিকার হলে,
৫.
শিশু অপহরণ বা ব্যক্তি অপহরণের
উদ্দেশ্যে আক্রমণ,
৬.
যদি অবৈধ ভাবে এবং এমন ভাবে আটকের আশংকা করে যে, আটকা পড়লে সরকারী বাহিনীর শরণাপন্ন হতে পারবে না।
কোন কোন সময় আত্মরক্ষা জন্য কাওকে খুন করা যাবে!
মানুষ
খুন করা মারাত্মক একটি অপরাধ। তবে কিছু পরিস্থিতি আত্মরক্ষার জন্য মানুষ খুন করা যাবে।
নিচে
সেই কারণ গুলো আলোচনা করা হল-
১. নিরপরাধ
ব্যক্তির
জীবন
রক্ষার্থে-
যদি
নিজের বা অন্য কোন
মানুষের জীবন রক্ষা করার জন্য কাওকে হত্যা করা হলে তা অপরাধ হবে
না।
২.দেহের উপর
চরম
আঘাত
আসার
সম্ভাবনা
দেখা
দিলে-
যদি
কোন ব্যক্তির দেহের উপর এমন কোন মারাত্মক আঘাত করা হয় যার কারণে
তার মৃত্যু হতে পারে বা শরীরে মারাত্মক
জখম হতে পারে, সেক্ষেত্রে তা প্রতিরোধ করতে
গিয়ে খুন করে ফেললে তা অপরাধ বলে
বিবেচিত হবে না।
৩.ডাকাতি বা
robbery আটকাতে গিয়ে-
কোন
ব্যক্তি যদি কোন ডাকাতির কবলে পরে, তবে ডাকাতি আটকাতে গিয়ে হত্যা করে ফেললে তা অপরাধ বলে
গণ্য হবে না।
৪. রাতে
যদি
দরজা
ভেঙে
কেও
গৃহে
প্রবেশ
করে
(House breaking by night) :
যদি
কোন অপরাধী রাতে ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করার চেষ্টা করে তবে, তাকে আটকানর জন্য আত্মরক্ষা অধিকার প্রয়োগ করা যাবে।
৫. অগ্নিসংযোগ
বা
(Mischief by fire)
কোন
অপরাধী যদি এমন কোন বাসা, তাঁবু বা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ
করার চেষ্টা করে যেখানে মানুষ বাস করে বা সেটি সম্পত্তি
রক্ষার জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হয় তবে আক্রমণকারীকে
প্রতিহত করার জন্য মৃত্যু ঘটালে তা আইনের দৃষ্টিতে
অপরাধ হবে না।
৬. গৃহে
অনধিকার
প্রবেশ-
কেও
যদি গৃহে অনধিকার
প্রবেশ করে এবং তাকে না আটকালে মারাত্মক
জখমের সম্ভাবনা আছে সেক্ষেত্রে প্রতিহত করার জন্য খুন করা যেতে পারে।
যে সকল ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না
তবে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করার ক্ষেত্রেও
কিছু বিধি নিষেধ রয়েছে। সব ক্ষেত্রে এই অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না। আবার, প্রয়োজনের
অতিরিক্ত আঘাত করা যাবে না।
১.সরকারী কোন কর্মচারী বা পুলিশের দায়িত্ব
পালন কালে এরূপ আত্মরক্ষা অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না।
২.
যে সকল ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য গ্রহণের সুযোগ এবং সময় আছে সে
ক্ষেত্রে
আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না,
৩.
আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্ষতি করা যাবে না,
যেমন,
কেও আপনার ব্যাগ টেনে ধরল। আপনি তাকে ঘুসি দিয়ে আত্মরক্ষার করলেন। সে দৌড়ে পালানর
চেষ্টা করল। সে সময় আপনি
তাকে দৌড়ে গিয়ে ধরে যদি ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলেন , তবে তা আত্মরক্ষার অধিকার
প্রয়োগ হবে না বরং অপরাধ
হবে। কারণ এখানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত আঘাত করা হয়েছে
সুতরাং, প্রতিটা
মানুষের তার নিজের জীবন রক্ষা করার অধিকার রয়েছে। আইন দ্বারা নাগরিককে সেই অধিকার দেয়া
হয়েছে। তবে, নাগরিকের এটা জানা থাকা প্রয়োজন কোন কোন ক্ষেত্রে সে তার আত্মরক্ষার অধিকার
প্রয়োগ করতে পারবে।
তবে, এ অধিকারের
অপব্যবহার করা যাবে না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত আঘাত করা যাবে না।
আইন জানুন,
ভালো থাকুন , নিরাপদে থাকুন!
No comments