আপনার বিয়েটি বৈধ হয়েছে তো? বিবাহের বৈধ উপাদানগুলো সম্পর্কে জানুন।


বিবাহ করেছেন?  আপনার বিয়েটি বৈধ হয়েছে তো? বিবাহের বৈধ উপাদানগুলো সম্পর্কে জানুন।


মুসলিম বিয়ে বৈধ হবার জন্য কিছু অপরিহার্য উপাদান রয়েছে। এগুলোর কোন একটি না থাকলে বিবাহ বাতিল হয়ে যেতে পারে।
মুসলিম আইন অনুসারে বিবাহ শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বা বিবাহ বলতে শুধু মাত্র ভালোবাসার বন্ধন বোঝায় না। বরং, মুসলিম আইনে বিবাহ হচ্ছে একটি চুক্তি। প্রতিটা চুক্তিরই কিছু উদ্দেশ্য থাকে   চুক্তির মাধ্যমে উভয়পক্ষ কিছু অধিকার লাভ করে এবং সেই সাথে তাদেরকে  কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়।
  বিবাহ  নামক এই চুক্তির মাধ্যমে নারী-পুরুষ বৈধ ভাবে শারীরিক ভাবে মিলিত হবার অধিকার লাভ করে। বিবাহের উদ্দেশ্য হচ্ছে বৈধ মিলনের মাধ্যমে সন্তান লাভ করা প্রতিপালন করা।
যেহেতু বিবাহ একটি চুক্তি, সেক্ষেত্রে চুক্তির ক্ষেত্রে যেসকল উপাদান কার্যকর হয় বিবাহের ক্ষেত্রেও সে সকল চুক্তি কার্যকর হবে
মুসলিম আইন অনুসারে বৈধ বিবাহের জন্য নিচের শর্ত গুলো অবশ্যই পুরন করতে হবে-

১। বিবাহ করবার  যোগ্যতা থাকতে হবে -
বিবাহ করার জন্য বর এবং কনে উভয়কেই বিবাহের জন্য যোগ্য হতে হবে। এখন কথা হচ্ছে এই যোগ্যতা গুলো কি? বর কনেকে সুস্থ মস্তিষ্কের এবং সাবালক হতে হবে। ইসলামী আইনে যদিও বিয়ের জন্য কোন বয়স নির্ধারণ করা নেই। তবে, বাংলাদেশের প্রচলিত মুসলিম আইন অনুসারে বিবাহের জন্য একটি নির্দিষ্ট বয়স নির্ধারণ করা রয়েছে।
ছেলেদের জন্য বিবাহের বয়স হচ্ছে ২১ এবং মেয়েদের জন্য বিবাহের বয়স হচ্ছে ১৮, তবে কিছু শর্ত সাপেক্ষে ১৬ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়া যাবে  


২। বিবাহের প্রস্তাব-
মুসলিম আইন অনুসারে বিবাহ সম্পন্ন করবার জন্য বিবাহ ইচ্ছুক পক্ষ গনের মধ্যে যে কোন এক পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসতে হবে। ইসলামী আইন অনুসারে একে বলা হয় ইজাব।

৩। প্রস্তাব গ্রহণ-
 ঠিক একই ভাবে এক পক্ষ প্রস্তাব দিলে অন্য পক্ষ থেকে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে। ইসলামী আইনে একে কবুল বলা হয়।  বিবাহ বৈধ হবার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


৪। ইজাব কবুল একই বৈঠকে সম্পন্ন হতে হবে
তবে আরেকটি শর্ত হচ্ছে বিবাহের প্রস্তাব এবং প্রস্তাব গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা এক বৈঠকে সম্পন্ন হতে হবে। এক বৈঠকে প্রস্তাব বা  proposal  এবং আরেক বৈঠকে প্রস্তাব গ্রহণ বা accept  করা হলে  বিবাহ সিদ্ধ হবে না।

৫। বিবাহের সাক্ষী থাকতে হবে-
পর্যাপ্ত সাক্ষী ছাড়া মুসলিম বিয়ে সম্পন্ন হয় না। অনেককেই বলতে শোনা যায় , আমরা আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করেছি। তবে ধরনের আবেগের কথা দ্বারা বিয়ে বৈধ হবে না।
 মুসলিম আইন অনুসারে সাক্ষী হিসেবে দুজন সুস্থ, প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ অথবা একজন সুস্থ ও প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ দুজন সুস্থ ও  প্রাপ্ত বয়স্ক নারী থাকতে হবে।

৬। প্রস্তাব গ্রহণের ভাষা সুস্পষ্ট হতে হবে-
বিবাহের প্রস্তাব এবং বিবাহের গ্রহণের ভাষা এরকম সুস্পষ্ট হতে হবে যেন বোঝা যায় বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে কোন রকম সন্দেহের অবকাশ থাকলে বিবাহ বাতিল হয়ে যেতে পারে।

৭। দেন মোহর
দেন মোহর হচ্ছে স্ত্রীর প্রতি সম্মান হিসেবে স্বামীর উপর একটি আরোপিত দায়িত্ব তবে দেন মোহর ছাড়া কোন বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেলে বিবাহ বাতিল হবে না সেক্ষেত্রে স্ত্রী যথাযথ ন্যায়সঙ্গত দেন মোহরের অধিকার লাভ করবে।  

৮। নিষিদ্ধ সম্পর্ক থাকা যাবে না-
বিবাহের পক্ষ গনের মধ্যে কখনই নিষিদ্ধ সম্পর্ক থাকা যাবে না মুসলিম আইনে ১৩ জন নারী কে বিবাহ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই ১৩ জন নারী হচ্ছে মা , মায়ের মাতা, কন্যা, কন্যার কন্যারা, বোন , বোনের কন্যা , ভাইয়ের কন্যা, খালা, ফুপু, বাবার স্ত্রী গন, পুত্রের স্ত্রী গন , দুধ মা,  দুধ সম্পর্কিত বোন ইত্যাদি  
এছাড়া, দুই বোনকে একত্রে বিয়ে করা যাবে না। তবে , এক বোনের সাথে বিচ্ছেদ ঘটলে তার বোনকে বিয়ে করা যাবে।

৯। রেজিস্ট্রেশন-
বৈধ  বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে রেজিস্ট্রেশন। ১৯৮০ সালের কাজীর আইন মোতাবেক প্রতিটি মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ধারার বিধান অনুসারে প্রতিটি বিবাহ অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা না হলে আইনত শাস্তির বিধান রয়েছে। সুতরাং বৈধ বিবাহের জন্য রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক।



যারা বিবাহ করেছেন বা করবেন তাদের উচিৎ দেশীয় আইন অনুসারে বৈধ বিবাহে উপাদান গুলো  সম্পর্কে জ্ঞান রাখা। তাহলে নিজের অধিকার রক্ষা করা সহজ হয়। প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
উপরের উপাদানগুলো ঠিক রেখে বিয়ে সম্পন্ন হলে আইনি সুবিধা পাওয়া সহজ হয়। বিশেষ করে নারীদের এধরনের আইন সম্পর্কে জ্ঞান রাখা খুবই জরুরী।    

জানুন, ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

No comments

Powered by Blogger.