বই প্রকাশের আইন বা Copyright act সম্পর্কে জানেন তো!
আমাদের দেশে ফেব্রুয়ারি
মাস এলেই প্রকাশনা পাড়ায় এক সাজ সাজ রব পড়ে যায়। প্রকাশকরা ব্যস্ত থাকেন নতুন বই বের
করতে আর লেখকরা ব্যস্ত থাকেন তাদের নতুন বই প্রকাশ ও পাঠক দের সাথে নতুন বই নিয়ে আলোচনায়।
তবে, অনেক সময় দেখা যায় কিছু অসাধু ব্যক্তি লেখকের অনুমতি ছাড়াই বই প্রকাশ করে থাকে।
ফলে লেখক আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়া , সঠিক ভাবে চুক্তি করা না
থাকলে লেখক ও প্রকাশকের মাঝে বিরোধ দেখা দিতে পারে।
যে কোন লেখা বা সৃষ্টিকর্ম
লেখকের একটি সম্পদ। মেধা থেকে উৎপন্ন হয় বলে এই সম্পদকে
বলা হয় বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি ।এই সম্পত্তি রক্ষার জন্য বাংলাদেশে আইন রয়েছে।এই আইনকে বলা হয় গ্রন্থ স্বত্ব আইন বা
Copyright Act.
অন্যান্য অনেক সম্পদের মত এই সম্পদ রক্ষায় লেখকদের
রয়েছে অধিকার। প্রকাশকরা যেহেতু বই প্রকাশের বিরাট কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করে সেহেতু এই
সম্পদের উপর তাদেরও অধিকার রয়েছে। সুতরাং,
বই প্রকাশের পূর্বে লেখক প্রকাশক উভয়ের আইন ও তাদের অধিকারগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া
উচিৎ।
নিচে এ সম্পর্কে কিছু আইনি পরামর্শ দেওয়া হল-
পাণ্ডুলিপি হস্তান্তরের পূর্বে লিখিত চুক্তি করে
নিন-
যদি কোন মৌলিক লেখা হয়
তবে পাণ্ডুলিপি প্রকাশকের কাছে তুলে দেবার পূর্বে লিখিত চুক্তি করা উচিত। কপিরাইট আইন
২০০০ তে – এ ধরনের চুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এই চুক্তিপত্রে কিছু বিষয়
উল্লেখ থাকতে হয়। যেমন- স্বত্বের অধিকার, স্বত্বের
মেয়াদ,স্বত্ব নিয়োগের ভৌগলিক পরিধি, রিয়েলিটির পরিমাণ ইত্যাদি। চুক্তিনামাটি কপিরাইট
আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী ৮০০ টাকা দিয়ে কপিরাইট অফিস থেকে নিবন্ধন করে নেওয়া উচিত। এই
চুক্তিনামার মাধ্যমে লেখক এবং প্রকাশক উভয়েরই আইনি অবস্থান গড়ে উঠবে। এর মাধ্যমে প্রকাশকের
যেমন আর্থিক অধিকার নিশ্চিত হবে, ঠিক তেমনি লেখকের নৈতিক ও আর্থিক অধিকার সুরক্ষিত
হবে। চুক্তিতে উল্লেখিত কোন শর্ত অমান্য করলে আইনি ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যাবে।
বই এর কপিরাইট নিবন্ধন করার সুবিধা
প্রতিটি লেখকেরই উচিৎ
তার বইটি কপিরাইট নিবন্ধন করে নেওয়া। প্রকাশিত বই এবং অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির কপিরাইট
নিবন্ধন করা যায়। লেখক যতদিন বাঁচবে ততদিন সে তার কপিরাইট অধিকার ভোগ করতে পারবে। কেও
যদি তার বই বা পাণ্ডুলিপি অবৈধ ভাবে অথবা অনুমতি ছাড়া ছাপায় তবে তার বিরুদ্ধে কপিরাইট
আইনে র মাধ্যমে আইনত ব্যবস্থা নিতে পারবে। লেখকের মৃত্যুর পর ৬০ বছর পর্যন্ত লেখকের
উত্তরাধিকাররা কপিরাইট অধিকার ভোগ করতে পারবে। ৬০ বছর পর কপিরাইটের অধিকার সাধারণ জনগণ
ভোগ করতে পারবে।
কপিরাইট নিবন্ধন করার পদ্ধতি
যারা যারা তাদের বই কপিরাইট
নিবন্ধন করতে চান তারা শেরে বাংলা নগরের কপিরাইট কার্যালয় থেকে তাদের গ্রন্থটি কপিরাইট
করে নিতে পারবেন। নিচে কপিরাইট করার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হল-
১. কপিরাইট কার্যালয়
থেকে একটি আবেদনপত্র সংগ্রহ করুন।
২.যে বিষয়টি কপিরাইট
করতে চান তার বিস্তারিত বিবরণ, স্বত্ব কার নামে হবে, শর্ত সমূহ ইত্যাদি তথ্য দিয়ে আবেদনপত্রটি
পুরন করুন ।
৩. কপিরাইট অফিসে আবেদনপত্রটির
তিনটি কপি জমা দিন ।
৪. পাণ্ডুলিপি বা বই
এর দুটি কপি করে জমা দিন ।
৫. ট্রেজারি চালানের
মাধ্যমে একটি ফি দিতে হবে। কি কপিরাইট নিবন্ধন করছেন তার উপর ভিত্তি করে ফি একেক রকম
হবে।
৬. হস্তান্তর সূত্রে
মালিকানার ক্ষেত্রে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হস্তান্তর দলিল দাখিল করতে হবে।
৭. পাণ্ডুলিপি বা বই
নিয়ে কোন মামলা-মোকদ্দমা বিচারাধীন নেই এবং
এর তথ্য নির্ভুল এ মর্মে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকার নামা জমা দিতে
হবে।
৮. কেউ যদি আইনজীবীর
মাধ্যমে আবেদনপত্র দাখিল করতে চান, সে ক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সঙ্গে ওকালতনামা দাখিল
করতে হবে।
৯. কপি রাইট আইন অনুসারে বই জাতীয় গ্রন্থাগারে জমা দিতে হবে। আইনে
প্রত্যেক প্রকাশককে তাঁর প্রকাশিত প্রতিটি বই এক কপি করে জাতীয় গ্রন্থাগারে জমা দেওয়ার
বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বই প্রকাশের তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তা জমা দিতে হবে, অন্যথায়
প্রতিটি বইয়ের জন্য দিতে হবে এক হাজার টাকা জরিমানা।
অনুমতি ছাড়া বই নকল করলে কি করবেন?
লেখকের অনুমতি ছাড়া বই
নকল করে বাজারে প্রকাশ করা মারাত্মক অপরাধ। এক্ষেত্রে দেওয়ানি আদালতে সরা সরি প্রতিকার
চাওয়া যাবে। জেলা জজ আদালতে ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য
প্রতিকার চেয়ে আবেদন করা যাবে।
বই নকল করার শাস্তি কি?
ফৌজদারি মামলা হলে শাস্তি
হিসেবে কপিরাইট ভঙ্গকারীর সর্বোচ্চ চার বছরের জেল এবং সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত
জরিমানা হতে পারে। এ ছাড়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই নকল বই জব্দ করার ক্ষমতা পুলিশের
রয়েছে।
আইন জানুন। ভালো থাকুন ।
No comments