আর নয় "ইভ টিজিং" !! নারীদের জন্য গুরুত্বপুর্ন টিপস!
মেলায়
যাইরে.. মেলায় যাইরে..
বাসন্তী রং
শারী পড়ে ললনারা হেটে যায়..
মেলায়
যাইরে.. মেলায় যাইরে..
বখাটে
ছেলের ভিড়ে ললনাদের রেহাই নাই...
উপরের
লাইনগুলো বাংলাদেশের খুব জনপ্রিয় একটি গানের কিছু কথা। কথা গুলো খুব জনপ্রিয়তা পেলেও, এই গানে বাংলাদেশের একটি
বড় সামাজিক সমস্যা উঠে এসেছে।
রাস্তা
ঘাটে নারীকে উত্যক্ত করার
প্রচলন অনেক আগে থেকেই ছিল।তবে, বর্তমানে বাংলাদেশে নারীকে উত্যক্ত করা
এক ভয়ংকর সামাজিক
সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। মাঝে মাঝে এ সমস্যা আত্মহত্যা,
ধর্ষণ এবং খুনের মত ভয়ংকর ঘটনায়
গিয়ে শেষ হয়।
এখন
কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ইভ টিজিং এর
কি কোন শাস্তি আছে? তাহলে উত্তর হচ্ছে, অবশ্যই আছে। ইভ টিজিং যেমন
বেড়ে গিয়েছে, তেমনি এর শাস্তিও কিন্তু
খুবই কড়া। এই আইন সম্পর্কে সবার জ্ঞান থাকা
অনেক বেশি জরুরী, বিশেষ করে নারীদের।
আসুন
তাহলে বাংলাদেশের আইনে ইভ টিজিং এর
শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
কি কি
কাজ ইভ টিজিং
এর পর্যায়ে পড়বে
বাংলাদেশের
আইন অনুসারে যে সকল কাজ ইভ টিজিং এর পর্যায়ে পড়বে, সেগুলো হচ্ছে-
১.প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজ করা,
২.
অশ্লীল গান গাওয়া,
৩.
কারো নারীর শ্লীলতা হানীর উদ্দেশ্যে কোন
কথা, কাজ বা অঙ্গ ভঙ্গী করা
,
৪.
অশ্লীল ভাবে কোন নারীর সামনে নিজের শরীর উপস্থাপন করা ,
৫.
কোন নারীর পথ আটকে দাঁড়ান
,
৬.
অশ্লীল কোন আওয়াজ করে কোন নারীকে বিরক্ত করা ,
উপরের
কাজগুলো ঘরে বা
বাইরে যেখানেই করুক না কেন তা
ইভ টিজিং এর আওতায় পড়
বে এবং এর জন্য রয়েছে
কঠিন শাস্তি।
- আইনে শাস্তি
সমূহ
এখন
দেখে নেই প্রচলিত আইনে ইভ টিজিং এর
শাস্তিগুলো কি?-
১. অশ্লীল
কথা
বা
গান
গাইলে
সর্বোচ্চ
তিন
বছরের
কারাদণ্ড,
অর্থ
দণ্ড
বা
উভয়
দণ্ডে
দণ্ডিত
হবে।
অন্যদের
বিরক্তি সৃষ্টি করে, প্রকাশ্যে এরকম শব্দ উচ্চারণ করলেই কিন্তু ইভ টিজিং এর
আওতায় তিন মাসের শাস্তি হয়ে যেতে পারে। অশ্লিল কোন গান, কবিতা, শব্দ উচ্চারন করলেও কিন্তু তা এই আইনের
আওতায় ইভ টিজিং হিসেবে গন্য হবে।
“দণ্ডবিধির
আইনের
২৯৪
ধারায়
বলা
হয়েছে,
যে
ব্যক্তি
অন্যদের
বিরক্তি
সৃষ্টি
করে,
কোনও
প্রকাশ্য
স্থানের
কাছাকাছি
কোনও
অশ্লীল
কাজ
করে
অথবা
কোনও
প্রকাশ্য
স্থানে
কোনও
অশ্লীল
গান,
গাথা
সংগীত
বা
পদাবলি
গায়,
আবৃত্তি
করে
বা
উচ্চারণ
করে;
সেই
ব্যক্তি
তিন
মাস
পর্যন্ত
কারাদণ্ড
বা
অর্থদণ্ডে
বা
উভয়
দণ্ডে
দণ্ডনীয়
হবে।“
২.কোন নারীর
শ্লীলতা
হানী
হয়
এমন
কোন
কথা
বা
কাজ
করলে
১
বছর
পর্যন্ত
কারাদণ্ড
বা
অর্থদণ্ড
বা
উভয়
দণ্ডে
দণ্ডিত
হতে
পারে
দণ্ডবিধির
৫০৯ ধারায় এ বিষয়ে স্পষ্ট
বিধান আছে। এ ধারায় বলা
আছে, যদি কেউ কোনও নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে কথা, অঙ্গভঙ্গি বা কোনও কাজ
করে, তাহলে দায়ী ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত
যেকোনো মেয়াদের সাজা বা অর্থদণ্ড কিংবা
উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।
৩.প্রকাশ্যে বা বাসায় যে
কোন স্থানে অশ্লীল অঙ্গ-ভঙ্গী করলে ১ বছর পরিমাণ
কারাদণ্ড বা ২ হাজার
টাকা পরিমাণ অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে
দণ্ডিত হতে পারে-
‘ঢাকা মেট্রোপলিটন
পুলিশ
অধ্যাদেশে
ইভ
টিজিং
বা
উত্ত্যক্ততা
বিষয়ে বলা
হয়েছে।
এই
অধ্যাদেশের
৭৬
ধারায়
বলা
হয়েছে,
যদি
কেউ
কোনও
রাস্তায়
বা
সাধারণের
ব্যবহার্য
স্থানে
বা
সেখান
থেকে
দৃষ্টিগোচরে
স্বেচ্ছায়
এবং
অশালীন-ভাবে
নিজ
শরীর
এমনভাবে
প্রদর্শন
করে,
যা
কোনও
গৃহ
বা
দালানের
ভেতর
থেকে
হোক
বা
না
হোক,
কোনও
নারী
দেখতে
পায়
বা
স্বেচ্ছায়
কোনও
রাস্তায়
বা
সাধারণের
ব্যবহার্য
স্থানে
কোনও
নারীকে
পীড়ন
করে
বা
তার
পথ
রোধ
করে
বা
কোনও
রাস্তায়
বা
সাধারণের
ব্যবহার্য
স্থানে
কোনও
অশালীন
ভাষা
ব্যবহার
করে,
অশ্লীল
আওয়াজ,
অঙ্গভঙ্গি
বা
মন্তব্য
করে
কোনও
নারীকে
অপমান
বা
বিরক্ত
করে,
তবে
সেই
ব্যক্তি
১
বৎসর
পর্যন্ত
মেয়াদের
কারাদণ্ডে
অথবা
২
হাজার
টাকা
পর্যন্ত
জরিমানা
বা
উভয়
দণ্ডে
দণ্ডিত
হবেন।‘
৪. যে কোন
ধরনের
অশ্লীল
আচরণ
এ
হতে
পারে
তিন
মাস
পর্যন্ত
কারাদণ্ড
বা
অর্থদণ্ড
ঢাকা মেট্রোপলিটন
পুলিশ
অধ্যাদেশের
৭৫
ধারা
অনুযায়ী
সমাজে
অশালীন
বা
উচ্ছৃঙ্খল
আচরণের
শাস্তি
হিসেবে
তিন
মাস
মেয়াদ
পর্যন্ত
কারাদণ্ড
বা
৫০০
টাকা
জরিমানা
বা
উভয়
দণ্ডের
কথা
বলা
হয়েছে।
৫. এছাড়া
কোন
ম্যাজিস্ট্রেটের
সামনে
যদি
এই
অপরাধ
ঘটে
তবে
ম্যাজিস্ট্রেট
তৎক্ষণাৎ
শাস্তি
দিতে
পারবে-
ভ্রাম্যমাণ
আদালত আইন অনুযায়ী, ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে কোনও অপরাধ হয়ে থাকলে তখনই অপরাধ আমলে নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট শাস্তি দিতে পারবেন। এই আইনে শাস্তি
হবে সর্বোচ্চ দুই বছর।
কিছু
প্রয়োজনীয় টিপস
কিছু
গুরুত্বপূর্ণ টিপস নিচে আলোচনা করা হল-
১.
আপনার সাথে যদি এমন কোন ঘটনা ঘটে তবে দ্রুত নিকটস্থ থানায় তা জানান বা
লিখিত অভিযোগ করুন। পুলিশও ইচ্ছা করলে
বাদী হয়ে মামলা করতে পারবেন।
২.
ঘটনা ঘটার সময় অপরাধী ও ঘটনাস্থল সম্পর্কে
যতটা সম্ভব তথ্য মনে রাখার চেষ্টা করুন। যদি অপরাধির নাম
ঠিকানা জানা থাকে তবে পুলিশকে তা সঠিক ভাবে
জানান। আর অপরাধী যদি
অপরিচিত কেও হয় তবে তার
চেহারা ও পোশাক এর
যথাসম্ভব সঠিক বর্ণনা দিন।
৩.
ঝুঁকি পূর্ণ জায়গা ও ঝুঁকি পূর্ণ
মানুষ এড়িয়ে চলার চেষ্টা
করুন।
৪.
যে জায়গায় যাবেন সেখানকার পুলিশ অফিসারের ফোন নম্বর সংগ্রহে রাখুন। নিচের ওয়েবসাইটের লিংকে বিভিন্ন জায়গার পুলিশ অফিসারদের ফোন নম্বর পাবেন-
৫.
আপনি কোথায় আছেন তা সবসময় পরিবারকে
জানিয়ে রাখুন।
৬.
পুলিশ যদি অভিযোগ না নেয় তবে
সরাসরি আদালতে মামলা করা যাবে।
৭.
আশে পাশে যদি ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম থাকে তবে তা ভ্রাম্যমান আদালতকে
জানান। দ্রুত প্রতিকার পাবেন।
৮.
আপনার আশে পাশে যদি অন্য কারো সাথে এমন ঘটনা ঘটতে দেখেন তবে সাহায্য করতে এগিয়ে যান। আইনি সহায়তা পেতে ভুক্তভোগী কে সহায়তা করুন।
৯.
তবে কাওকে হয়রানী করার জন্য বা প্রতিশোধ নেবার
জন্য এমন কোন মামলা করবেন না। তাহলে কিন্ত উলটো ফেঁসে যাবেন।
১০.
আপনি যেই হোন না কেন দুর্বল
কোন নারীকে উত্যক্ত করা
থেকে বিরত থাকুন। কারণ এসব থেকেই যদি আত্মহত্যা, খুন, ধর্ষণ এর ঘটনা ঘটে
তবে নারী ও শিশু নির্যাতন
মামলায় শাস্তি কিন্তু অনেক বেশি।
১১.
খারাপ সংগ থেকে দূরে থাকুন।
নিরাপদে থাকুন,
ভালো থাকুন!
No comments