এন্টিবায়োটিক কোর্স শুরুর পূর্বে ১০ টি করনীয়।
বিভিন্ন
সময় আমাদের এন্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় । তবে
এন্টিবায়োটিক কোর্স শুরুর পূর্বে কিছু নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হবে। সেই সাথে ডাক্তারের কাছ থেকে কিছু তথ্য অবশ্যই জেনে নিতে হবে।
সঠিক নিয়মে
ডোজ না নিলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে, অথবা অসুধ ঠিক মত কাজ নাও করতে পারে।
সুতরাং ,
এন্টিবায়োটিক শুরুর পুর্বে নিচের নিয়ম গুলো মেনে চলুন-
ডাক্তার
ওষুধের যে সময় নির্ধারণ
করে দেন সে সময় মেনেই
ওষুধ খেতে হবে। ডাক্তার যদি বলে ৮ ঘণ্টা পর
পর খেতে হবে, তবে অবশ্যই এক ডোজ থেকে আরেক ডোজেরর মধ্যে পার্থক্য ৮ ঘণ্টাই হতে
হবে। এর মানে এই
নয় যে ২৪ ঘণ্টার
মধ্যে যে কোন সময়
৩ বার ওষুধ খেলেই হবে।
কারণ
এন্টিবায়োটিক তখনই কার্যকর হবে যখন এক ডোজ থেকে
আরেক ডোজের মধ্যে পার্থক্য সমান হবে। এর ফলে রক্তে
সবসময় ওষুধের পরিমাণ সমান থাকবে।
টিপস-
তবে,
অনেকেই এন্টিবায়োটিক এর সময় মেনে
চলতে পারেন না বা ভুলে
যান। সেক্ষেত্রে, তারা একটি কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। সেটা হচ্ছে কোর্স টা এমন সময়
শুরু করতে হবে যেন আপনি সহজেই তা মেনে চলতে
পারেন। যেমন, ঘুম থেকে উঠার পর এক ডোজ,
দুপুরে খাবারের সময় এক ডোজ এবং
ঘুমাতে যাবার আগে এক ডোজ। এভাবে
মেনে চললে এন্টিবায়োটিকেরবনির্দিস্ট সময়
মনে রাখা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
২. ডোজ
মিস
করলে
কি
করবেন?
ভুলবশত
আপনার এন্টিবায়োটিক এর ডোজ যদি
মিস হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে করনীয়
কি হবে তা ডাক্তারের কাছে
জেনে নিতে হবে।
কারণ
কিছু এন্টিবায়োটিক আছে যেগুলোর ডোজ ভুলে গেলে, যখন মনে পরবে তখনই তা খেয়ে নিতে
হবে। আবার কিছু ডোজ আছে যেগুলো ভুলে গেলে অপেক্ষা করতে হয়। পরবর্তী ডোজের সাথে তা একসাথে সেবন
করতে হয়।।
সুতরাং
কোর্স শুরু হবার পূর্বেই ডাক্তারের কাছ থেকে ভালো ভাবে তথ্যগুলো জেনে নিন।
৩. সুস্থ
অনুভব
করলেই
এন্টিবায়োটিক
কোর্স
বন্ধ
করবেন
না।
অনেকেই
আছে এন্টিবায়োটিক কোর্স শুরু করার পর একটু ভালো
অনুভব করলেই তা বন্ধ করে
দেন বা পরের ডোজ
গুলো এলোমেলো করে গ্রহণ করেন। একাজ কখনই করবেন না। এতে শরীরের জীবাণুগুলো এন্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্স ক্ষমতা লাভ করবে। ফলে, পরবর্তীতে ওষুধেও তা কাজ করবে
না।
এজন্য
ডাক্তার যে সময় নির্ধারণ
করে দিয়েছে সে সময় পর্যন্ত
ওষুধ খেয়ে যেতে হবে।
৪. শরীরের
অবস্থা
অবনতি
হলে
বা
উন্নতি
না
হলে
ডাক্তারকে
জানান
কিছুদিন
এন্টিবায়োটিক খাওয়ার পর যদি দেখেন
শরীরের অবস্থা আরও অবনতি হচ্ছে সেক্ষেত্রে দেরী না করে দ্রুত
ডাক্তারকে জানান। এছাড়া যদি দেখেন কিছুদিন খাওয়ার পরেও শরীরের কোন উন্নতি হচ্ছে না সেক্ষেত্রেও ডাক্তারের
পরামর্শ নিন।
এন্টিবায়োটিক
এর ডোজ খাওয়ার সাথে সাথে পুরো এক গ্লাস পানি
পান করলে সুফল পাওয়া যাবে। এতে পেটের অসুবিধা কম হবে। এন্টিবায়োটিক
এর সাথে পানি খুব ভালো কাজ দেয়। কোর্স চলাকালীন সময় খেয়াল রাখবেন
শরীরে যেন পানি স্বল্পতা না হয়।
৬. খাবারে
কোন
বাছ
বিচার
করতে
হবে
নাকি
তা
ডাক্তারের
কাছ
থেকে
ভালো
ভাবে
জেনে
নিন-
কিছু
ওষুধের সাথে কিছু খাবার অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারবে। এজন্য ডাক্তার যখন ওষুধ প্রেসক্রাইব করবে তখন জেনে নিন খাদ্য তালিকা থেকে কোন খাবার বাদ দিতে হবে নাকি। যেমন- দুধ বা দুধ জাতীয়
খাবার টেট্রাসাইক্লিন এর কার্যকারিতা কমিয়ে
দেয়। আবার কিছু কিছু এন্টিবায়োটিক এ আঙুর জাতীয়
ফলের রস সমস্যা সৃষ্টি
করে। ডাক্তারের কাছ থেকে এই তথ্যগুলো জেনে
নিতে হবে। এছাড়া কিছু ওষুধ খালি পেটে খেতে হয়। ভরা পেটে খেলে তা ওষুধকে শরীরে
মিশে যেতে বাধা সৃষ্টি করে। সুতরাং, এন্টিবায়োটিক এর ডোজটি
ভরা পেটে খেতে হবে নাকি, খালি পেটে খেতে হবে সেই তথ্যটি ভালো ভাবে জেনে নিন। এবং ,
তা মানার চেষ্টা করুন।
৭. প্রোবায়োটিক
খাবার
প্রয়োজন
হতে
পারে-

প্রোবায়োটিক গ্রহণ করলে তা দেহে কার্যকর
প্রতিষেধক ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ওষুধ সেবনের সময় একটি ভারসাম্য তৈরি হয়। এজন্য চিকিৎসক যদি প্রোবায়োটিক নিতে বলে তাহলে অবশ্যই নিয়ম মেনে তা গ্রহণ করতে
হবে। চিকিৎসক প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই বা প্রোবায়োটিক
সাপ্লিমেন্ট খেতে বলতে পারে।
আরও পড়ুন-
আরও পড়ুন-
![]() |
৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রোবায়োটিক |
৮. পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা সাইড ইফেক্টগুলো জেনে নিন
প্রতিটি এন্টিবায়োটিক
এর কিছু সাইড ইফেক্ট আছে । সেগুলো জেনে নেওয়া ভালো। কিছু সাধারণ সাইড ইফেক্টের মধ্যে আছে-
• পাতলা
পায়খানা হওয়া,
• পেটে অস্বস্তি হওয়া,
• চুল পড়া,
ইত্যাদি।
তবে কিছু
কিছু সাইড ইফেক্ট আছে যেগুলো দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তার কে জানাতে হবে –
• খুব বেশি
বমি হওয়া,
• খুব বেশি
ডায়রিয়া হওয়া,
• এলার্জির
সমস্যা দেখা দিলে,
• র্যাশ
দেখা দিলে
• অজ্ঞান
হয়ে যাওয়া,
• ঠোট, চেহারা
, জিহ্বা ফুলে উঠা,
৯। সঠিক উপায়ে ওষুধ সংরক্ষণ করুন-
কিছু কিছু
বাচ্চাদের ওষুধ ফ্রিজে রাখতে হয়। আবার কিছু ওষুধ আছে যেগুলো রুম টেম্পারেচারে রাখলেই
চলে। ওষুধের গায়ের লেবেল ভালো ভাবে পড়ে নিন।
১০। নিজে নিজে এন্টিবায়োটিক এর ডোজ নেবেন না-
কারো অসুখের
সাথে আপনার অসুখের উপসর্গ মিলে গিয়েছে এজন্য তাকে ডাক্তার যেই ডোজ দিয়েছে , আপনিও সেই
ডোজ খেয়ে ফেললেন। বা অতীতে একই রকম অসুখের
ক্ষেত্রে ডাক্তার যে এন্টিবায়োটিক দিয়েছিল, আবার একইরকম অসুখ হওয়াতে নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে
একই রকম ডোজ খেয়ে নিলেন। আর ভাবলেন ডাক্তারের টাকা বেঁচে গিয়েছে। ?!
সাবধান! এধরনের
ভুল কখনই করবেন না। বয়স, অসুখ ও অবস্থা ভেদে ডোজ ভিন্ন হয়। এছাড়া, ডাক্তারকে কখনই এন্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করার জন্য চাপ দিবেন না । গবেষণায় বলে, ঠাণ্ডা,
সাইনাস এধরনের সমস্যায় এন্টিবায়োটিক না নিয়ে অপেক্ষা করাই বেশি ভালো।
এছাড়া, এন্টিবায়োটিক
ডোজ কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
সুতরাং, এন্টিবায়োটিক
এর কোর্স শুরু করার পূর্বে উপরের পরামর্শ গুলো
মেনে চলুন।
ভালো থাকুন,
সুস্থ থাকুন।
আরো পড়ুন-
![]() |
সিজারিয়ান: এক পঙ্গুত্ব! |
![]() |
কোমর ব্যথায় করণীয় |
এখন গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তারগুলোই কারণে অকারণে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন। তারা রোগীর ভাল খারাপ বিবেচনা না করেই নিজেদের ব্যবসার জন্য এই ধরনের ঔষধ দিয়ে থাকেন। তাই কত দিন কত দিন খেতে হবে সঠিকভাবে উল্লেখ করলে ভাল হত।
ReplyDeleteএটা বিশেষজ্ঞ ডাঃ এর কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।
Deleteধন্যবাদ।