জিডি ও এজহারের মধ্যে পার্থক্য জানেন কি? (Difference between GD and FIR)
মানুষ কোন বিপদে পরলে বা তার জান,মাল, সম্পদ বিপদের সম্মুখীন হলে পুলিশের কাছে সাহায্য চায়। কিন্তু অনেকেই পুলিশের কাছে সাহায্য চাইবার সঠিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানে না। বিপদে পরলে এজহার করতে হবে নাকি জিডি করতে হবে সে ব্যপারে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারনে সাধারন মানুষ প্রতিকার থেকে বঞ্চিত হয়। মানুসের জীবনে কখন কোন বিপদ আসে তা কেও জানে না। তাই, এই বিসয়গুলো সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
সুতরাং,
আজকে আলোচনা করব কখন জিডি করতে হবে এবং কখন এজাহার করতে হয়।
জিডি বলতে কি বোঝায়? (What is GD)
জিডি বা GD
অর্থ Generel Diary বা সাধারণ ডায়রি । কোন বিষয়ে জিডি করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানায়
গিয়ে নির্দিষ্ট ঘটনাটি মৌখিক বা লিখিত আকারে কর্তব্য রত পুলিশ অফিসারকে জানাতে হবে।
জিডি করার জন্য কোন টাকা বা ফি দিতে হয় না। থানায় গেলেই দায়িত্ব রত পুলিশ অফিসার জিডি
লিপিবদ্ধ করে দেয়।
কোন বিষয়ে জিডি করা
হলে,
পুলিশ সে ঘটনাটি তদন্তের
মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তবে, জিডি করা মানে মামলা করা নয়।মামলা তখনই হয় যখন কোন অপরাধ ঘটে
যায় বা সংঘটিত হয়। কিন্তু কোন অপরাধ বা বিপদ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে,
কেও হুমকি দিয়েছে যার ফলে ভবিষ্যতে অপরাধ সঙ্ঘটিত হতে পারে এমন
আশংকা দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জিডি করতে পারে।
অথবা, আইডি কার্ড হারিয়ে গিয়েছে
, তা দিয়ে কেও অপরাধ সংঘটিত
করে আপনাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে, হারানোর পর পর জিডি করলে জিডির কপিটি আপনাকে আইনি সহায়তা
পেতে সাহায্য করবে। এছাড়া , জিডি করার ফলে অপরাধ সঙ্ঘটন কারী সতর্ক হয়ে যায়। সুতরাং, জিডি হল আইনি সাহায্য পাবার
প্রথম পদক্ষেপ। যে সকল কারণে জিডি করবেন
১।কারও দ্বারা ভীতি প্রাপ্ত হলে,
২। নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে
৩।ভবিষ্যৎ কারো দবারা ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে এমন আশংকা করলে,
৪।কোন ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা থাকলেও জিডি করা যায়।
৫।কোন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র,
যেমন পরিচয়পত্র,
পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, সনদ, দলিল, মোবাইল ফোন প্রভৃতি হারিয়ে গেলে।
৬। কেও নিখোঁজ হলে ।
৭। কাজের লোক হঠাৎ না বলে চলে গেলে।
৮। কোন মূল্যবান জিনিস হারিয়ে গিয়েছে বা হারানোর আশংকা দেখা দিয়েছে,
অনেকের ধারণা,
জিডি শুধু কেউ ভয়ভীতি বা হুমকি দিলেই করতে হয়। আসলে তা নয়। যেকোনো ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রেই প্রাপ্তবয়স্ক যেকোনো ব্যক্তি থানায় জিডি করতে পারেন।
কিভাবে জিডি করতে হয়? (The process of GD)
· যে বিসয়ের উপর জিডি করা হয় তার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আবেদন করতে হবে,
· জিডিতে ঘটনা সংঘটিত হবার স্থানের নাম, সময়,সাক্ষী, সন্দেহকারী ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, সন্দেহের কারন উল্লেখ করতে হবে।
· আবেদনপত্রের শেষে থাকবে জিডিকারীর নাম, বাবার নাম ঠিকানা,তারিখ
· জিডির আবেদনপত্রটির তিনটি কপি করে থানায় জমা দিতে হবে। কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার প্রতিটি আবেদনপত্রে জিডি এন্ট্রির নম্বর ও তারিখ সম্বলিত সিলমোহর দিবে। এরপর, একটি কপি থানার রেকর্ডের জন্য সংগ্রহ করবে। একটি কপি আবেদনকারীকে ফেরত দেওয়া হবে। তৃতীয় কপিটি তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের জন্য রাখা হয়।
· নিয়ম হচ্ছে জিডি করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনাটির তদন্ত করা হবে।
· তবে বাংলাদেশে বিপুল জনসংখ্যা ও কম তদন্ত কারী অফিসারের কারণে , সকল ঘটনা তদন্ত করা সম্ভব হয় না। তবে অপরাধ সংঘটিত হয়ে গেলে জিডির কপিটি অপরাধ প্রমান করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কাজ করবে।
এজাহার করবেন কখন (What is FIR)
সহজ কথায়,
কোনো অপরাধ সম্পর্কে থানায় যে অভিযোগ দেওয়া হয়,
তাকে এজাহার বা এফআইআর বা FIR
(First Information Report) বলে। অর্থাৎ,
অপরাধ বা অপরাধমূলক কোন কিছু ঘটে যাবার পর সে বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য থানায় এজাহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এজাহারের মাধ্যমে থানায় মামলা করা হয়। রাষ্ট্র পক্ষের যে কোন মামলার আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয় এজাহারের মাধ্যমে। অর্থাৎ,
যে কোন মামলার প্রথম ধাপ হল এই এজাহার।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে বা তাঁর পরিবারের কেউ কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি,
যিনি ঘটনা ঘটতে দেখেছেন কিংবা ঘটনার কথা শুনেছেন বা অবগত আছেন,
তিনি থানায় এজাহার করতে পারবেন। ঘটনাটি যে থানার এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে,
সাধারণত ওই থানাতেই করা উচিত। এজাহারে ঘটনার পূর্ণ বিবরণ,
ঘটনার স্থান,
সময়, কীভাবে ঘটনা ঘটল, তার বিবরণ স্পষ্টভাবে লিখতে হবে। এজাহার কারীর পূর্ণ ঠিকানা ও স্বাক্ষর থাকতে হবে। যদি মৌখিকভাবে থানায় এজাহার দেওয়া হয়, তাহলে থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তা লিখবেন এবং এজাহার কারীকে শোনাবেন। এজাহার কারীর স্বাক্ষর অবশ্যই দিতে হবে।
আরও পড়ুন-
আরও পড়ুন-
এজহার করার পদ্ধতি (Process of FIR)
১। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে তার নিকটস্থ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ওসির নিকট এজাহার করতে হবে,
২। এজাহার লিখিত বা মৌখিক দুই ভাবেই করা যায়। তবে,
লিখিত হলেই ভালো।
৩। ঘটনার পূর্ণ বিবরণ,
ঘটনার সময়,
স্থান, কিভাবে ঘটনাটি ঘটল, কেন ঘটল, দায়ী ব্যক্তি বা আসামীর নাম যদি জানা থাকে তবে তার পূর্ণ বিবরণ,নাম,ঠিকানা লিখতে হবে।
৪। এজাহার কারীর পূর্ণ ঠিকানা ও সই থাকতে হবে।
৫। যদি মৌখিক ভাবে এজাহার করা হয় তবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সঠিক ভাবে এজাহারটি লিখবেন। লিখে তা এজাহার কারীকে পড়ে শুনাবেন । এজাহারকারী মনোযোগ দিয়ে তা শুনে সন্তুষ্ট হলে স্বাক্ষর দিবেন।যে কর্মকর্তা এজাহার লিখবেন তিনিও সিল ও সই দিবেন।
৬। ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই যত দ্রুত সম্ভব এজাহার করতে হবে। অনেক সময় দেরি হলে ঘটনাটি মামলা করার গ্রহণ যোগ্যতা হারায়। আর যদি বিশেষ কারণে দেরি হয়েই যায় তবে বিলম্ব হবার কারণ এজাহারে উল্লেখ করতে হবে।
জিডি ও এজহারের মধ্যে পার্থক্য (GD vs FIR)
অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে,
জিডি আর এজাহার এক বিষয়। এ দুটি এক বিষয় নয়। জিডি হচ্ছে থানায় কোনো ঘটনা সম্পর্কে অবগত করা মাত্র, আর এজাহার হচ্ছে সরাসরি মামলা গ্রহণে পদক্ষেপ নেওয়া।
জিডি কোনো অপরাধ সংঘটনের বিরুদ্ধে আইনি সহায়তাকারী সংস্থার সাহায্য পাওয়ার জন্য প্রথম পদক্ষেপ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,
একজন ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এটি যদি হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা হয়, তাহলে জিডি করতে হবে। আর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি যদি অপহরণের কারণে হয়, তাহলে এজাহার করতে হবে।
মনে রাখতে হবে,
জিডি থেকেও মামলা হতে পারে। কোনো থানায় জিডি করার পর যদি পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে গুরুতর কোনো অপরাধের প্রমাণ মেলে,
তাহলে পুলিশ বাদী হয়ে নন-এফআইআর মামলা করতে পারে। এ অনুযায়ী পুলিশ নন-প্রসিকিউশন প্রতিবেদন দাখিল করতে পারে এবং এর ভিত্তিতে বিচার শুরু হতে পারে। তাই থানায় গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে পুলিশকে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত। কোনো ভুলের কারণে সঠিক আইনি আশ্রয় থেকে যেন বঞ্চিত না হোন,
এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
আরও পড়ুন-
আরও পড়ুন-
হুমকি, প্রতারণা, হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে জিডির ফরম্যাট |
জিডি না নিলে করনীয় কী?
ReplyDelete